প্রজাপতির ক্ষোভ

ক্ষোভ (জানুয়ারী ২০১৪)

সহিদুল হক
  • ১১


ইচ্ছে করে দূরের ঐ নীল আকাশটাকে ছুঁতে ; শরতের সোনালী রোদে মাখামাখি হয়ে আরও সব প্রজাপতিদের সাথে সব বাধা ঠেলে এক ইচ্ছে-উড়ান দিতে ইচ্ছে করে খুব।সব কিছু ভুলে গিয়ে তাই সে রঙীন ডানা মেলে উড়তে যায় মনের আগল ঠেলে উচ্ছ্বাস ভরা চোখ মেলে।কিন্তু হায়!চার দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আছড়ে পড়ে বিছানায়। নিঃশব্দ কাতরানি পৌঁছায় না কারও কানে, ডানায় যে বড় ব্যথা!

কাল সারা রাত দু চোখের পাতা মেলাতে পারেনি সে; মাম্মি-ড্যাডির ওয়েডিং সেরিমনি ছিল যে কাল, বন্ধুদের সাথে হাসি হুল্লোড় আর তামাশায় মাতিয়ে রেখেছিল সারাটা বাড়ি।কালুর মা রাতের খাবার সাজিয়ে দিয়েছিল টেবিলে, ইচ্ছে করেনি খেতে; স্বাদ ছিল না জিভটাতে, কেমন যেন তিতকূটে ভাব, জ্বর এসেছিল বুঝি চুপিসাড়ে, 'আজ আর স্কুলে গিয়ে কাজ নেই', বলেছে মাম্মি।
যেতে বললেও পারতো কি সে যেতে?
ডানায় যে বড় ব্যথা!

ড্যাডি গেজেটেড অফিসার,মাম্মি সার্ভিস করে মাল্টি ন্যাশনালে। সময় কোথায় তাদের? ঘরে রিমোট কন্ট্রোলে চালিত কত রকমের খেলনা। বোরিং লাগে ও গুলো নিয়ে খেলতে, ভীষণ ইচ্ছে করে ডানা মেলে উড়তে,যত বার ইচ্ছেরা বাঁধ ভাঙে ততবার চার দেয়ালে ধাক্কা খায় আর বিছানায় আছড়ে পড়ে। আজ
ইচ্ছেটাই মরে গেছে, উড়ে গেছে দূর আকাশে তারাদের মাঝে।রাত-জাগা চোখে হাত বুলিয়ে একটু ঘুমপাড়িয়ে দিত যদি ঘুম-পাড়ানি মাসি!উঠে বসতেও বেশ কষ্ট।
ডানায় যে বড় ব্যথা।


প্রজাপতির মাম্মির মনটা মোটেই ভাল নেই আজ দেরি হয়েছে অফিস যেতে, বাকি যে অনেক কাজ।
খেতে হবে বুঝি বসের ধাতানি মনে জাগে বড় ভয় এদিকে আবার মুঠোফোনে তার, রিংটোন শুনতে পায়; একরাশ বিরক্তি নিয়ে শুঁয়োরানি কানটা লাগায় ফোনে বাড়ির ল্যান্ডলাইন থেকে এসেছে ফোন,কি হল কে জানে!
কালুর মায়ের গলা ,"এখনই বাড়ি চলে আসুন বৌদিমণি, ভয়ার্ত গলায় বললে আরো,"কেমন যেন করছে খুকুমণি!"
শুঁয়োরানি ভাবে, মেয়েটা আজকাল ফাজিল হয়েছে এতো, আগের মতোই কালুর মায়ের সাথে দুষ্টুমি করছে না তো?
বললে ফোনে,"ফোনটা ওকেই দাও, ঘরেই তো ও আছে"
বললে কালুর মা,"আমাকে তো ঘেঁসতেই দিচ্ছে না কাছে দুষ্টুমি করে জানি কিন্তু এমন কখনো করতে দেখিনি আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন চলে আসুন বৌদিমণি"
ফোনটা রেখে শুঁয়োরানি দোটানায় পড়ে গেল বেশ অফিসের বহু্ বাকি কাজ আজই করতে হবে শেষ, বসের আবার ভীষণ কড়া মেজাজ,শুনতে চায় না কথা
শুঁয়োরাজাকে করলে সে ফোন বোঝে যদি তার ব্যথা।
শুঁয়োরাজা শুনেই বলে,"বিচ্ছু মেয়ে করছে দেখো নাটক অফিসে যা কাজ জমেছে,ছ'টা অবধি থাকতে হবেআটক"
"আমারও আজ প্রচুর কাজ, যাও না তুমি লক্ষ্মীসোনা"
"তোমার যাওয়াই বেটার হবে,আমি গিয়ে লাভ হবে না"
হতাশ হয়ে শুঁয়োরানি বাড়িতে করলো আবার ফোন, তুললো না কেউ কোন বারই , কু গাইছে এবার মন।



অনেক ভেবে শুঁয়োরানি জয়াকে ধরলো ফোনে, রাখবে কথা বান্ধবী তার ভাবলো মনে মনে ;
বললে জয়া,"ভাবিসনা তুই যাচ্ছি আমি এখনই কেমন আছে খুকু মণি জানিয়ে দেব তখনই"
ফাইল খুলে শুঁয়োরানি মন লাগালো কাজে এমন সময় মূঠো ফোনের রিংটা ওঠে বেজে
রিসিভ করেই শুনতে পেল জয়ার কাঁপা গলা,
-"তুকতাক কেউ করেছে ওকে,যায় না কিছুই বলা"
-"ঐ টুকু মেয়ের ঊপর তুকতাক করতে যাবে কে?"
-"বাইরে আপন সেজে ভিতরে ভিতরে হিংসে করে যে,
কাল রাতে যা করলি, তা তো আভিজাত্যের প্রদর্শন, হিরের সেটটাও দেখালি, আবার এলাহি সব আয়োজন"
-"আমি বিশ্বাস করিনা তুকতাকে,ওসব সত্যি না হয় যেন"
-"কিন্তু ছটফটে ঐ মেয়েটা রাতারাতি বদলে গেল কেন?"

শুঁয়োরানি-শুঁয়োরাজা ফিরলো বাড়িতে সন্ধ্যায় হাঁটুতে মুখ গুঁজে খুকু বসে আছে খাটের কোণটায় ড্যাডি কাছে যেতে আতঙ্কে খুকু আরও দূরে সরে বসে
ড্যাডি ফিরে এলে খুশি হত খুব, এমনতো করেনা সে!
মেয়েকে দেখে শুঁয়োরানির বুকে ঠেলে ওঠে যত দুখ, চোখের কোণে পড়েছে কালি, পাংশু হয়েছে মুখ।
"জয়া বলেছে তান্ত্রিক ডাকতে "বললো শুঁয়োরানি।
-"ওসব ডেকো তুমি ,আমি সাইকোলজিস্ট মানি"
বলেই তার বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো শুঁয়োরাজা। কার পাপে যে ছোট্ট মেয়ে, ভুগছে এমন সাজা?

"বলনা খুকু কি হয়েছে? রেখেছি তো তোকে সুখে"
চোখ বড় করে তাকায় খুকু ,বলে না কিছুই মুখে। কালুর মাকে ডেকে বলে,রাতের বেলা এই ঘরে তো থাকিস কিছু কি কাল ঘটেছিল?দোহাই তোকে,বল না যা যা জানিস।"
-"দাদাবাবুর ফোনটা নিয়ে খুকুমণি খেলছিল কাল রাতে তোমরা তখন নাচে গানে মত্ত ছিলে, বন্ধুদেরই সাথে"



জয়া ঘরে ঢুকে কি যেন খোঁজে প্রজাপতির ব্যাগে বার করে আনে কি সব যেন, কাঁপতে থাকে রাগে,
"এই দ্যাখ বেলফুলের মালায় দু গাছি লম্বা চুল, খুকুর রুমালে লাল-রঙা ছোপ,আমার হয় নি ভুল, ঠিকই ভেবেছিলাম, এসব ব্ল্যাক ম্যাজিকের খেলা,
করিস না দেরি,তান্ত্রিক-ওঝা ডেকে আন এই বেলা।"
--কেমন করে এলো ওসব খুকুর ব্যাগের ভিতর!
--ভেবে দ্যাখ ভাল করে,কোন শত্রু আছে কি তোর?

কুল না পেয়ে শুঁয়োরানি কালুর মাকে ডাকে,
--কাল রাতে কেঊ ঢুকেছিল খুকুর ঘরে অনুষ্ঠানের ফাঁকে?
--ঢুকেছিল তো,মোটা-ফর্সা মতন বঊ,দেখি নি এর আগে খোঁপায় ছিল বেলফুলের মালা,দেখতে ভালই লাগে।
--ডান গালে কি তিল ছিল তার,নীল শাড়ি ছিল পরে?
--হ্যাঁ।ঘরেই ছিলাম,কিন্তু খুকু থাকতে দিল না ঘরে।

বুঝলো শুঁয়োরানি,এ সেই শুঁয়োরাজার পুরনো বন্ধুর বঊ, স্ট্যাটাসে পিছিয়ে অনেক, পাত্তা দেয় না কেউ। হিংসা করেই করেছে এসব ঐ বঊটাই ঠিক, 'এমন ক্ষতি কেঊ করতে পারে!ধিক তোকে শত ধিক!'
যেমন করেই হোক বঊটাকে ডেকে আনতে হবে এখনই দিতে হবে উচিত শিক্ষা,আসবে এখানে যখনই। শুঁয়োরাজাকে লাগায় ফোন,সব কথা বলবে বলে,
তাড়াহুড়োয় ফেলে গেছে ফোন ঐ তো খুকুর টেবিলে।
ড্যাডির সেই মোবাইলের দিকে চেয়ে আছে প্রজাপতি, আতঙ্কিত দৃষ্টি যে তার,যেন সেটাই তার করবে ক্ষতি।


শুঁয়োরাজা ফিরে এসে দেখে, ভিড় জমেছে ঘরে ফর্সা-মোটা সেই বঊটাকে শুঁয়োরানি জেরা করে,
--কাল রাতে তুমি পার্টি ছেড়ে কেন খুকুর ঘরে ছিলে?
--বাথরুম থেকে বেরোতেই খুকু হাত ধরে টান দিলে। বললে,আমার ঘরে এসো,একা একা লাগছে না যে ভাল,
তোমার সঙ্গে খেলবো আমি, এক্ষুণি তুমি চলো'
আমি বলি,আজ নয় খুকু অন্য দিনে খেলবো তোমার সাথে, পার্টিতে আমায় যোগ দিতে হবে আজ অনুষ্ঠানের রাতে'
অমনি খুকু পিচকারি দিয়ে রং ছুঁড়ে দিল মুখে বললে,যাও পার্টিতে,রং লেগে আছে মুখে পিঠে বুকে'
তারপর হাতটা ধরে জোর করে টেনে নিয়ে গেল ঘরে একটা রুমালে সব রং মুছে বললে,বোসো চুপটি করে
সাপ-লুডো খেলবো তোমার সাথে,শর্তটায় হও রাজি যা চাইবে দিতে হবে তাকে জিতবে যে এই বাজি'
ছোট্ট মেয়ের মন রাখতে চালিয়ে গেলাম খেলা চালাকি করে জিতলো খুকু, চাইলো আমার মালা।

শুঁয়োরাজা বললে, ছাড়োতো ওসব,এটা নয়কো কারও চাল সাইকোলজিস্টকে দেখাতে হবে,ডেট পেয়েছি কাল।
এমন সময় শুঁয়োরাজার ফোনটা উঠলো বেজে প্রজাপতি বললে হঠাৎ,ওটার ভিতর ভূত ভরেছে কে যে?'
শুঁয়োরানি ছুটে গিয়ে টেবিল থেকে ফোনটা এনে ঘাঁটে 'কি যে হলো খুকুমণির?' বুকটা যে তার ফাটে;
ভূত দেখেছে এটার ভিতর আমার খুকুমণি?
ঘাঁটতে ঘাঁটতে মোবাইলে দেখলো শুঁয়োরানি, বিকৃত রুচির পর্নে ভরা ফোনের ভিডিও ফাইল
বুঝলো,প্রাণবন্ত মেয়েটার হাল কেন এত কাহিল।
অগ্নি চোখে শুঁয়োরাজাকে চিৎকার করে বলে, এসব কি ভরেছো শুনি,তুমি এমন তলে তলে?'
--সিধু কাল পার্টিতে ওসব দেখাচ্ছিলো তার ফোনে পাঠিয়ে দিয়েছে আমার ফোনে,একটুও ছিল না মনে।'
এক আছাড়ে দামী মোবাইল ভাঙলো শুঁয়োরানি প্রাজাপতির ডানায় বুঝি শক্তি এল অনেকখানি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আল জাবিরী ভালো লাগলো
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৪
অশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪
মিলন বনিক পদ্য কবিতার ছন্দে পুরো গল্পটা খুব ভালো লাগলো...শুভকামনা....
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৪
অশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু ছন্দে ছন্দে পড়তে ভালই লাগলো, বিষসবস্তু ও দারুন, শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১৪
অশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন....
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪
ঐশিকা বসু গল্পটি খুবই সুন্দর।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪
অশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১৪
আশা হাজারো শুয়োরাজাকে হুশিয়ার করার মতো একটি উপযুক্ত টপিক তুলে এনেছেন আপনার কাহিনী কাব্যে। সুন্দর।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৪
গঠনমূলক সুন্দর মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ। ভাল থাকুন নিরন্তর।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৪
সুমন প্রথম প্যারা শেষ হবার পরই যেন চলে গেলাম কাহিনী কাব্যে। বেশ ভাল একটা টপিক তুলে এনেছেন গল্পে। ঝগড়া আর অশ্লীলতায় প্রজাপতিরা এমনই চুপসে যাচ্ছে। খুব সুন্দর গল্প।
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৪
গঠনমূলক সুন্দর মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ। ভাল থাকুন নিরন্তর।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৪
দীপঙ্কর বেরা Khub sundar golpo ti . Bhalo laglo
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৪
অশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৪
Rumana Sobhan Porag হক ভাই খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৪
অশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ৬ জানুয়ারী, ২০১৪
আলমগীর সরকার লিটন বেশ তো গল্পটা --
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৪
অশেষ ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৬ জানুয়ারী, ২০১৪

১১ সেপ্টেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪